ছোটন চক্রবর্ত্তীঃ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার চট্টগ্রাম জেলাধীন সাতকানিয়া উপজেলার পূর্ব নলুয়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে আগমন হল এক অপরিচিত ভক্তের। সময়টা তখন আনুমানিক বেলা ১১ঘটিকা। শ্যামলা লোকটার ব্যক্তিত্বসম্পর্ন্ন পোষাক, চোখে চশমা, পায়ে বাটা জুতা, হাতে কালো অফিসিয়াল ব্যাগ, আলাদা একটা পলিথিন ব্যাগ কয়েক পোটলা ফল-ফলাদি। মন্দিরের সদর দরজা খোলা থাকলেও বিগ্রহ রুমের দরজা বন্ধ। ঐ ভক্ত মন্দিরের পুরোহিতের জন্য অপেক্ষা করছিল। পুরোহিত অজিত চক্রবর্ত্তীর আগমনের সাথে সাথে মন্দিরের বিগ্রহ রুমের সামনে অবস্থান করেন লোকটি। পুরোহিতের পূজাকর্ম শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে রইল লোকটি, মোমবাতি প্রজ্বলন করল, নারায়নের স্নানীয়জল ও আশির্বাদ গ্রহণ করল, ব্রাহ্মণকে ২০/-টাকা প্রণামী দিল। পুরোহিতের পূজাকর্ম শেষে স্থানীয় মন্দির সমূহ সম্পর্কে জানতে চাইল। পরিচয় দিলেন তিনি চন্দনাইশের জামিজুরী থেকে এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। পরে পুরোহিতকে অনুরোধ করলেন প্রার্থনার জন্য কিছুক্ষণ বিগ্রহ রুমের দরজা খোলা রাখতে। পুরোহিত ঊনার অনুরোধ রাখা সম্ভব নয় জানিয়ে রোজকারমত মন্দিরের দরজা বন্ধ করলেন। পরে লোকটি গেলেন পূর্ব নলুয়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দিরে। সেইসময় উক্ত মন্দিরের পুরোহিত তড়িৎ ভট্টাচার্য্যের ভাইপো নিহার ভট্টাচার্য্য মন্দিরের নিত্যপূজার জন্য মন্দিরে উপস্থিত হয়। পুরোহিত সদর দরজা খোলার পর নিয়ম অনুযায়ী মন্দিরে উঠার পূর্বে হাত-পা ধৌত করতে যেতে উদ্যত হলে লোকটি বিগ্রহ কক্ষে দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করে। পুরোহিত নিয়ম অনুযায়ী নিজেকে শুদ্ধ করার পূর্বে বিগ্রহ কক্ষের দরজা খোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। পুরোহিতের নিত্য পূজাকর্ম শেষ হওয়া পর্যন্ত লোকটি সেখানেও অবস্থান করেন, মোমবাতি প্রজ্বলন করেন, স্নানীয়জল ও আশির্বাদ গ্রহণ করেন এবং ১৫/-টাকা ব্রাহ্মণ দক্ষিণা প্রদান করেন। পুরোহিতের কাছে জানতে চান রক্ষাকালী মায়ের বিগ্রহের গলায় কোন স্বর্ণালংকার নেই কেন পরে তিনি সেখানেও প্রার্থনার জন্য মন্দিরের দরজা খোলা রাখার অনুরোধ করেন এবং পুরোহিত অপারগতা জানিয়ে সেখানেও দরজা বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে পুরোহিত পূর্ব নলুয়া সরকারবাড়ী নারায়ণ-শিব মন্দিরে আসেন নিত্য পূজাকর্ম করতে। লোকটি পুরোহিতের পেছন পেছন আসলেও উক্ত মন্দিরে প্রবেশ করেননি। মন্দিরটি পারিবারিক হওয়ায় পূজাকর্ম শেষে পুরোহিত উক্ত মন্দিরের বিগ্রহ কক্ষের দরজা বন্ধ করেন না। সরকার বাড়ির লোকজনই স্নানকর্ম শেষে মন্দিরের বিগ্রহ দর্শন ও প্রণাম শেষে দরজা বন্ধ করেন। পুরোহিত চলে যাওয়ার পর ঐ লোকটি সেই মন্দিরে প্রবেশ করে মোমবাতি প্রজ্বলন, স্নানীয়জল ও আশির্বাদ গ্রহন করে নিরবে প্রার্থনায় বসেন। দেখতে ভক্ত ও ভদ্রলোক মনে হওয়ায় কেউ বিষয়টিকে ভিন্নভাবে নেয়নি। কিছুক্ষণ পর ঐ বাড়ির লোকজন এসে লোকটিকে আর দেখতে পায়নি। সাথে খোয়া গেল মন্দিরের শিববিগ্রহের স্বর্ণের চেইন ও মন্দিরের ব্যবহারিক তামা-কাস-পিতলের জিনিস সহ প্রায় ৫০,০০০/-( পঞ্চাশ হাজার)টাকার সমপরিমাণ জিনিস। আর সেই ভক্ত ও ভদ্র চোর মন্দিরে রেখে গেলেন তার হাতে থাকা ফল-ফলাদির ব্যাগটি। যেখানে ছিল তিনটি আপেল, তিনটি মোচাম্বির, একপোয়া পরিমাণ কুল।
দিন দুপুরে এই এক অভিনব চুরি। তাই সবাইকে যার যার এলাকার মন্দির সমূহের বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।