এম জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী:: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়ন যেন গরু মহিষ চুরি চোর চক্রের সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের সদস্যদের উৎপাতে অতিষ্ঠ। যারা একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরাতো, তারা এখন অলৌকিকভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার মালিক। তাদের ঘরে রয়েছে অলৌকিক ভাবে শত শত বা একাধিক গরু বা মহিষ। তারাই কেউ গরু চোর বা মহিষ চোর অথবা চোর চক্রের সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের সদস্য। অলৌকিক ভাবে প্রশাসনের নিরব থাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও গুঞ্জন। এতে সামাল দিতে বিপাকে পড়েন স্থানীয় চেয়ারম্যান। শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন চেয়ারম্যান। চলে যায় নাগালের বাইরে।
তারই ধারাবাহিকতায় যেন গরু চোরেরও রয়েছে ধর্ম। যখন গরু চুরি করেও লোকদেখানো ভাবে চুরি যাওয়া গরু খুজতে গরুর মালিকের সাথে চোর করেন খোঁজাখুজি। আশ্চর্য বিষয় হলেও এটা বাস্তব ঘটনা ঘটেছে বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের পূর্ব কালাইয়া গ্রামে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাঙ্গাবালী উপজেলার গরু মহিষের ব্যবসায়ী ফারুক প্যাদা নামে একজন লোক গরু মহিষের পাশাপাশি তরমুজ চাষ করতে আসেন কালাইয়ার চরে। তরমুজ চাষ শেষ করেছেন ফারুক প্যাদা। বিছানা বাটি গোছগাছ করেছেন নিজ বাড়ি রাঙ্গাবালীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। কিন্তু ব্যবসার কিছু আগেই একাধিক গরু মহিষ ট্রলার যোগে পাঠিয়ে দিয়েছেন নিজ গ্রামে। অবশিষ্ট দুটি গরু বাধা ছিল শৌলার চরে। এদিকে আগে থেকেই পূর্ব কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আলমগীর সিকদারের ছোট ছেলে মোঃ ফারুক সিকদারের সাথে বেশ আত্মীয়তা সক্ষতা ছিল ফারুক প্যাদার। যার দরুন ফারুক সিকদারের বাড়িতে আসা যাওয়া সহ একাধিক বার খাওয়া দাওয়া রাত যাপন করতো ফারুক প্যাদা।
ঘটনাদিন গত রোববার (৯ই এপ্রিল-২০২৩) দুপুরের দিকে ফারুক সিকদার তার নিজের গরু চর থেকে নিয়ে আসার সময় ফারুক প্যাদার অবশিষ্ট দুটি গরুর মধ্যে বলদ গরুটা চুরি করে নিয়ে আসে। এবং এক নির্জন ঝাড়জঙ্গলে নিয়ে বেধে রাখে। ঠিক সন্ধ্যার পরে অন্ধকারের আড়ালে ফারুক সিকদার তার খালাতো ভাই বজলুর বাড়ি নিয়ে বেধে রাখে। এদিকে দুপুরের পরপরই ফারুক প্যাদা তার দুটি গরুর মধ্যে বলদ গরু না দেখে ফারুক সিকদারের সহযোগিতায় ফারুক প্যাদা বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোজাখুজি করেও গরুটি না পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েন। কিন্তু ফারুক সিকদারের কথাকাজে মিল না থাকায় আগে থেকেই ফারুক প্যাদার সন্দেহ বাড়তে থাকে ফারুক সিকদারের প্রতি। পরে স্থানীদের সহযোগিতায় ফারুক সিকদারকে চাপসৃষ্টি করে ওইদিন গভীর রাতে গরুটি উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভুক্তভোগী ফারুক প্যাদা বলেন, আর কি বলব ভাই। যা কখনো ভাবিনি তাইই হলো। যা-ই ই হোক এব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান মনির ভাইকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশাবাদী তিনি সঠিক বিচার করবেন আমি সঠিক বিচার পাবো।
এপ্রসঙ্গে জানতে প্রতিবেদক অভিযুক্ত ফারুক সিকদারের সাথে যোগাযোগের স্বার্থে তার পরিবারের কাছে গেলে তার পরিবার বলেন সে বাজারে গেছে।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে সোহেল স্যার জানান, এব্যাপারে ফারুক সিকদারকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে মীমাংসা করা হয়েছে।
এব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান এসএম ফয়সল আহমেদ বলেন, এব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক বলেন, এব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর চোর ডাকাতদের ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য:: গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর-২০২২) বিকেল ৫টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌ পুলিশের একটি টিম কালাইয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন খালপাড় থেকে একটি বড় টমটমে করে চোরাইকৃত ৪টি মহিষ নিয়ে যাওয়ার সময় উদ্ধার সহ ড্রাইভার মোঃ আশরাফ আলী খা (৪৫) কে আটক করা হয়। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে গরু ও মহিষ চোর চক্রের সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের সদস্য ১/মোঃ সাইফুল ইসলাম মোল্লা (২২),! ২/মোঃ জাহিদুল ইসলাম,। ৩/মোঃ মন্নাত মৃধা (৬০)। তারা তার গাড়ি ভাড়া করে মহিষগুলো মৈশাদি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বলা হয়। পরেরদিন শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে গরু ও মহিষ চোর চক্রের সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের ওই ৪ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা রুজু করে আটককৃতকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর উদ্ধারকৃত ৪টি মহিষ কালাইয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির জিম্মায় রাখা হয়। মামলাটি এখন তদন্তের উপর রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও কয়েকদিন পর পর গরু ও মহিষ চোর সহ গরু মহিষ ধরা পড়ে। তা আবার অলৌকিক বলে মীমাংসা হয়ে যায়। যারা এই মীমাংসার নেতৃত্ব দেন তাদের অনেকেই এই চক্রের সাথে জরিত বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে নাম না বলা একাধিক সাধারণ মানুষ জানান, কালাইয়া ইউনিয়নের পূর্ব কালাইয়া, চর কালাইয়া ও শৌলা এলাকায় গরু ও মহিষ চোর চক্রের সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের সদস্যরা রয়েছে এবং বেপরোয়া হয়ে চলছে। সাধারণ মানুষের একাধিক গরু ও মহিষ দিন দিন চুরি হচ্ছে। এ চোর চক্রের সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ তথা কৃষক।