বেড়েই চলেছে নিষিদ্ধ পলিথিনের প্রকাশ্য ব্যবহার। ক্ষতিকর পলিথি আইনের তোয়াক্কা না করেই সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিত জীবনের অনিবার্য অংশ হয়ে উঠেছে। অথচ পলিথিন ও প্লাস্টিকের ক্ষতির কথা ভেবে ২০০২ সালে এদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। শাস্তির বিধান রেখে আইনও করা হয়। তখন বিকল্প হিসেবে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার থামানো যায়নি। বরং কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে আরো পলিথিন চলে আসে। এখন দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বর্তমানে নিষিদ্ধ পলিথিনের আধিপত্য চরম পর্যায়ে রয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। ফলে বাড়ছে রোগব্যাধি, অকাল মৃত্যু। হুমকিতে জনস্বাস্থ্য। তাছাড়া পলিথিন ড্রেনে পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। মাটির উর্বরা শক্তি কমছে। নদীতে গিয়ে হচ্ছে দূষণ। পরিবেশবাদী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশজুড়েই প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজারে পণ্য বিক্রিতে প্রায় শতভাগ ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর পলিথিন। চাল, ডাল, তেল, সবজি বিক্রিতেও পলিব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি পলিথিন ব্যাগে করে খাবার আনা-নেওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে গরম খাবার বহন করা, ফ্রিজে পণ্য রাখতেও ব্যাপকভাবে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ শাস্তিযোগ্য আইন থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। ফলে বহুদিন আগেই পলিথিনের ব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, কাঁচাবাজারে এখন পাটের ব্যাগ পাওয়া যায় না, আর কাপড়ের ব্যাগের দাম বেশি। কিন্তু পলিথিনের দাম কম। বহনে সহজ। তাই ব্যবহারও বেশি হচ্ছে। যে কোনো পণ্যেই দোকানিরা পলিথিন ব্যাগ দিচ্ছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত নয়। বাজার পলিথিনে সয়লাব। তবে নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে তা কমিয়ে আনা সম্ভব।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর তথ্যানুযায়ী, শুধু ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যাগ জমা হচ্ছে। আর বিশ্বে প্রতি বছর ৫ লাখ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। পলিথিনের বহুবিধ ব্যবহারের কারণে মানবদেহে বাসা বাঁধছে ক্যান্সার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলের হরমোন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে দেখা দিতে পারে বন্ধ্যত্ব, নষ্ট হতে পারে গর্ভবতী মায়ের ভ্রমণ, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক বা পলিথিনে গরম পানি বা গরম খাবার ঢালার সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিসফেলন-এ তৈরি হয়। বিসফেনল-এ থাইরয়েড হরমোনকে বাধা দেয়। বাধাপ্রাপ্ত হয় মস্তিষ্কের গঠনও। গর্ভবতী নারীদের রক্ত থেকে বিসফেনল-এ যায় ভ্রƒণে। ফলে নষ্ট হতে পারে ভ্রƒণ, দেখা দিতে পারে বন্ধ্যত্ব। শিশুও হতে পারে বিকলাঙ্গ। তাছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ১০ কারণের মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিকের ব্যবহার। তাছাড়া পলিথিনের বহুবিধ ব্যবহারে বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। পলিথিনে শুধু গরম খাবার বা গরম পানির ব্যবহারেই ক্ষতি হয় না, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি বা হিমায়িত (ফ্রিজিং) পানির ব্যবহারেও সমানভাবে ক্ষতি হয়। পলিথিনে মুড়িয়ে ফ্রিজে রেখে সেই খাবার গ্রহণ করলেও সমান ক্ষতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের লোকজনের শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে এবং অকাল মৃত্যু ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে নগরবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ক্ষতিকর পলিথিন। কিন্তু এর ব্যবহার হচ্ছেই। এটা খুবই খারাপ। প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে যেমন কঠোর হতে হবে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে। মানবদেহের ক্ষতি ছাড়াও পলিথিন নদীতে যাচ্ছে। ড্রেনে যাচ্ছে। জমিতে যাচ্ছে। এখন সমুদ্রেও যাচ্ছে। পলিথিনের কারণে কোথাও আজ নিরাপদ নয়। শক্তহাতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার রোধ করতে হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জানান, পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহার করা মানে বিপদ ডেকে আনা। প্লাস্টিক শরীরে ক্যান্সার তৈরি করার প্রথম ১০টি কারণের মধ্যে একটি। সব প্লাস্টিকই ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। পলিথিনে খাবার বহন কিংবা ফ্রিজে রাখা একই কথা। সবই ক্ষতিকর। প্লাস্টিক খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তাতে কিডনি ড্যামেজ, লিভার অকেজো, বন্ধ্যত্ব ও ভ্রƒণ নষ্ট হতে পারে। তবে তা ব্যবহারের ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে।