নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বপ্নের পথের শুরুটা হয় ২০১৬ সালে। বাংলাদেশে নারীদের পোশাক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা ফারহানা আফরোজ উদ্যোগ নিলেন দেশীয় ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি পৌঁছে দিবেন সকলের কাছে। এরই লক্ষ্যে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নাইয়োরী জামদানি’নামে খুললেন একটি পেজ। এরপর সেখানে তিনি দিতে লাগলেন নিজের বুনন করা জামদানি শাড়ির ছবি। অল্পতেই তার তৈরি শাড়িগুলো নজর কাড়লো শাড়িপ্রেমীদের কাছে। সেখান থেকেই শুরু হয় নারী উদ্যোক্তা ফারহানা আফরোজ এর ব্যবসায়িক সফলতার গল্প।
সম্প্রতি, প্রতিবেদককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফারহানা আফরোজ জানান নিজের ব্যবসায়িক শুরুর সময়ের স্মরণীয় মুহুর্তগুলোর কথা। এতকিছুর ভীড়ে কেন জামদানি নিয়ে কাজ শুরু করলেন? জানতে চাইলে জবাবে ফারহানা আফরোজ বলেন, মেয়েদের পোশাক নিয়ে যেহেতু দীর্ঘদিন ধরেই আমার পথচলা আর তাই আমি চেয়েছিলাম মূলত দেশীয় কিছু নিয়ে কাজ করতে। যাতে আমার কাজ করার পাশাপাশি বিশ্বের কাছে আমি আমার দেশকেও প্রেজেন্ট করতে পারি। মূলত এই জায়গাটা থেকেই আমি জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করি। আর তাছাড়া দেশীয় বাজারে শাড়ীপ্রেমীদের কাছে জামদানির প্রচুর চাহিদাও রয়েছে ।
তিনি জানান, শাড়ী মূলত বাংলাদেশী নারীদের ঐতিহ্যের প্রতীক। কথায় আছে শাড়ীতেই নাড়ী। আজকাল তো বাজারে ইন্ডিয়ান-পাকিস্তানি আর ওয়েস্টার্ন ড্রেসের ছড়াছড়ি। আর এসবের ভীড়ে যাতে বাংলাদেশের পোশাক হারিয়ে না যায় সেজন্যই বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী জামদানী শাড়ী নিয়ে আমি কাজ করছি। শুধু বাংলাদেশে নয়, আমি চেষ্টা করছি এদেশের বুনন শিল্পীদের স্বপ্ন বিশ্ববাজারেও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। প্রতিনিয়তই দেশের বাইরে থেকেও সাড়া পাচ্ছি।
ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ‘নাইয়োরী-Naiyoree-Jamdani’র জন্য জামদানিগুলো কোথায় কিভাবে তৈরি করা হয় জানতে চাইলে নারী উদ্যোক্তা ফারহানা আফরোজ জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রায় অর্ধশতাধিক তাঁতশিল্পীর সমন্বয়ে শাড়িপ্রেমীদের জন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। সেই সাথে সারাদেশের জেলাগুলোতে আমাদের তাঁতশিল্পীরা রয়েছে। তাদেরকে সমন্বয় করে প্রতিনিয়তই আমরা গ্রাহকদের জন্য জামদানি তৈরি করে যাচ্ছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, দেশের আউটলেটগুলোতে ক্রেতারা একই ডিজাইনের শাড়ি চাইলেও একটি বেশি আরেকটি পায় না। কারণ শো-রুম কোম্পানীগুলোর কাছে বেশি একটা কালেকশন থাকে না। কিন্তু, একই ডিজাইনের শাড়ি আমরা একাধিক পিস গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী তৈরি করে দিতে পারি।
সাক্ষাৎকারে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘নাইয়োরী-Naiyoree-Jamdani’র শাড়ি তৈরি উন্নতমানের রেশমী সুতা ব্যবহার করা হয়। তিন বছর শাড়ি ব্যবহারের পর যে কেউ চাইলে শাড়িকে আবার নতুনের মতো রিপিয়ারিং করিয়ে নিতে পারবেন। আমাদের কারিগররা গ্রাহকদের এই বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছেন। পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই লক্ষ টাকার মূল্যের জামদানি শাড়ি আমরা সরবরাহ করে থাকি।
গ্রাহক পর্যায়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘নাইয়োরী-Naiyoree-Jamdani’র গ্রাহক জনপ্রিয়তার ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, জনপ্রিয়তার কথা যদি বলতে চাই, তাহলে বলব শাড়িপ্রেমীরা আমাদের জামদানির মান দেখেই আমাদেরকে ভালোবাসতে শিখেছে। তাদের এই ভালোবাসা আছে বিধায়-ই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মূলত ‘নাইয়োরী-Naiyoree-Jamdani’ নামে আমাদের একটি পেজ রয়েছে। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরেই এই সেক্টরে কাজ করে আসছি তাই গ্রাহকরা আমাদের ওই পেজের সাথে যুক্ত রয়েছেন। আমাদের তৈরি জামদানিগুলো সেখানে পোস্ট করা হলে সেখান থেকেই গ্রাহকরা আমাদের সাথ যোগাযোগ করে থাকেন। আর তাছাড়া স্যোসাল মিডিয়ায় আমাদের মার্কেটিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ফেসবুকে ‘নাইয়োরী-Naiyoree-Jamdani’র পেজ ও গ্রুপে আমাদের তৈরি শাড়িগুলোর ছবি রয়েছে, গ্রাহকরা চাইলেই সেখান থেকে অর্ডার করতে পারবেন। অর্ডার পরবর্তী আমাদের নিজস্ব ডেলিভারি ব্যবস্থায় ঢাকাসহ দেশের যেকোন স্থানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রোডাক্ট পৌঁছে যাবে। গ্রাহকরা ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে শাড়িগুলো নিয়ে নিতে পারবে। তবে দেশের বাইরে থেকে যে অর্ডারগুলো আসে সেগুলো ডেলিভারি দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা অগ্রিম পেমেন্ট নিচ্ছি।
দেশীয় ঐতিহ্য মিশ্রিত বস্ত্রশিল্পের এই নারী উদ্যোক্তা সম্পর্কে জানা যায়, মূলত একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ফারহানা আফরোজ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কাজ করছেন দেশের বস্ত্রশিল্প নিয়ে। পোশাক নিয়ে কাজ করার সুবাদে ঘুরেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতেও। এমনকি এই পেশার গুণেই দেশের বাইরেও ভ্রমণ করেছেন তিনি। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে উন্নত বিশে^ মানুষ যখন সবকিছু হাতের কাছে পেতেই আগ্রহী হয়ে উঠছে তখন নিজের দেশে এর বিপ্লব ঘটাতে চাইলেন ফারহানাও। মূলত সেখান থেকেই অনলাইনে তিনি শুরু করেন নিজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফসল বাংলার ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ির প্রচারণা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফেসবুকে তিনি ‘নাইয়োরী-Naiyoree-Jamdani’র পেজ খোলার পর থেকেই এখন পর্যন্ত ক্রেতা-গ্রাহকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে তার এই ব্র্যান্ড।