রকি পাটওয়ারী: ১৬ মে মধ্যরাতে হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায়, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, ঢাকা মহানগর উত্তরের ছয়টি থানা কমিটি অনুমোদন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু গভীর রাতে এসব কমিটি গঠন কিংবা অনুমোদন নিয়ে কিছুই জানেন না ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফ। উত্তরের আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফের দাবি, তার স্বাক্ষর জাল করে নিজেদের লোক দিয়ে ৬ থানার ভূয়া কমিটি গঠন করছেন সদস্য সচিব রুনা লায়লা আর সবকিছু জেনে শুনে সেটি অনুমোদন দিয়েছেন মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ।
ভয়াবহ এ স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে এরই মধ্যে উত্তর বিএনপির রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নানা মহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা । অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাক্ষর জালিয়াতি করে যদি ভূয়া কমিটি গঠন করা যায়, তাহলে তো আরও ভয়ংকর কন্ড গঠানো সম্ভব তাকে দিয়ে।
নিউজ সার্কেলের কাছে, বিএনপি মহাসচিব বরাবর, স্বাক্ষর নকল করে জালিয়াতির কমিটি গঠন নিয়ে অভিযোগের একটি চিঠির অনিলিপি এসেছে। যেখানে উত্তরের আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফ লিখেছেন, ৬টি থানার কমিটি গঠন নিয়ে কিছুই জানেন না তিনি। মধ্য রাতে কমিটি দেয়া হয়েছে তার সীল ও স্বাক্ষর জাল করে।
তাৎক্ষণিকভাবেই বিষয়টি আমলে নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অভিযোগ গুরতর উল্লেখ করে বিষযটি দ্রুত খতিয়ে দেখতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদকে নির্দেশনা দেন তিনি। সেখানে এ ধরণের জালিয়াতি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
এদিকে, জালিয়াতির ঘটনায় যখন তোলপাড়, উত্তাল উত্তর মহিলা দলের রাজনীতি, তখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেনা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সসদ্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। এ ধরণের জালিয়াতির ঘটনা জানার পর বিষ্ময় প্রকাশ করেন। দ্রুত সংকট সমাধানে তৎপর হন আফরোজা আব্বাস।
পরে বিএনপির পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে জালিয়াতির ঘটনা খতিয়ে দেয়া হয়। তদন্তে উত্তর মহিলা দলের আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফের করা অভিযোগের সত্যতা পায় বিএনপি। জানা যায়, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্বাক্ষর জাল করে `মাই ম্যান` সৃষ্টি করতে কমিটি দিয়েছেন সদস্য সচিব রুনা লায়লা, আর তাকে আস্কারা দিয়েছেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ।
বিএনপির নিজস্ব তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে, শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তর মহিলা দলের ৬ থানা কমিটি বাতিল করা হয়। কমিটি বাতিল নিশ্চিত হওয়ার পর নতুন নাটক শুরু হয় হলে অভিযোগ করেন উত্তর মহিলা দলের অনেক নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, সেই নাটকের অংশ হিসাবেই ৬ কমিটির নেতা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয় আছে উত্তর মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে। একপক্ষ বলছে, এসব কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের বাদ দেয়া হয়েছে। অন্যপক্ষ বলছে, উত্তর মহিলা দলের আহ্বায়ক নায়াব ইউসুফ ভদ্র, বিনয়ী ও কর্মীবান্ধন নেত্রী। তাঁকে না জানিয়ে কিংবা তাঁর স্বাক্ষর জাল করে কমিটি গঠন কোনভাবে ঠিক হয়নি, তাই ৬ থানা কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত যথার্থ ও বাস্তবসম্মত।