নানা অনিয়ম ও রোগীদের জিম্মির অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে তিনশ স্পেশাল (অবৈতনিক) আয়া-ওয়ার্ডবয়কে অব্যাহতি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার থেকে তাদেরকে কাজে যোগ দিতে নিষেধ করে এই বিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ বলেন, নানান অভিযোগ রয়েছে এসব স্পেশাল আয়া-ওয়ার্ডবয়দের বিরুদ্ধে। এ কারণে বিকল্প পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ করে এসব আয়া ও ওয়ার্ডবয়দেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চমেক পরিচালক বলেন, আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে একদফা জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অব্যাহতি দেয়া আয়া-ওয়ার্ডবয়দের স্থলে তারাই দায়িত্ব পালন করবে। আরো জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কোনো ধরনের বেতন-ভাতা ছাড়া প্রায় সাড়ে তিনশ স্পেশাল আয়া-ওয়ার্ডবয় হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতেন। অবৈতনিক হিসেবেই তারা হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন। প্রতি রোগী সেবা দেয়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নেয়ার অনুমতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা রোগীদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, টাকা ছাড়া কোনো কাজই করতেন না এসব আয়া-ওয়ার্ডবয়। একজোট হয়ে এরা প্রায় সময় রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেন। টাকার বিনিময়ে হাসপাতালের বেড ভাড়া দিতেন তারা। এছাড়াও রোগীর ওষুধপত্র চুরি, ওয়ার্ডে দালালদের ঢুকতে সহায়তা করতেন তারা। এমনকি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি চুরির অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, জনবল সংকট থাকায় তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, এসব অভিযোগের কারণে মনে হয় এ হাসপাতালে কোনো সেবাই নেই। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এসব আয়া-ওয়ার্ডবয়ের অপকর্মের কারণে হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েই চলেছে।
এজন্য সেবা নিশ্চিতে নতুনভাবে জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এদেরকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। জরুরি বিভাগেও চিকিৎসা নেন গড়ে প্রায় এক হাজার রোগী। ছুটির দিন ব্যতীত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন দেড় থেকে দুই হাজার রোগী। এক হাজার ৩১৩ শয্যার এ হাসপাতালটি চলছে মাত্র পাঁচশ শয্যার জনবল দিয়ে। জনবল সংকটে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর এজন্য (অবৈতনিক) আয়া-ওয়ার্ডবয় নিয়োগ দিয়েছিল চমেক কর্তৃপক্ষ।