নুরুল আমিন হাসান, (ঢাকা):
কিশোরগ্যাং, মাদক, বহু মদের বার আর যানজটের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রাজধানীর উত্তরাবাসী। সকলকে সাথে নিয়েই এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উত্তরা ৩ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির অফিসে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় বক্তারা এসব অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। সভাটির আয়োজন উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাহউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা জোনাল টিমের এডিসি বদরুজামান জিলু, উত্তরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সুমন কর, ট্রাফিক পুলিশের বিমানবন্দর ও উত্তরা পূর্ব জোনের সিনিয়র এসি সাখাওয়াত হোসেন সেন্টু ও মো. ইব্রাহিম। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান ও ৪৯, ৫০ ও ৫১ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা’সহ বিভিন্ন সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যানরা।
আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় উত্তরা ১ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘মহাসড়ক থেকে ১ ও ৩ নং সেক্টরে প্রবেশপথ বন্ধ থাকায় সেক্টরের ভেতরে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সেক্টরের ভেতরে ফুটপাত দখল করে রাখা ভ্যানের কারণেও দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।’
সাবেক ব্যাংকার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জমজম টাওয়ার পেছনের রোডে এবং পাশের পাঙ্খা মামারা চায়ের দোকানে মাদক ও কিশোরগ্যাংয়ের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও সেক্টরে অটোরিকশার বেপরোয়া হয়ে গেছে।’
সভায় অন্যান্যরা বলেন, বিভিন্ন সেক্টরের খালি জায়গা ও প্লটগুলোতে বাচ্চারা স্কুল পোষাক পরেই মাদক সেবন করে। যার মধ্যে অন্যতম ১৩ নং সেক্টরের ১ ও ১২ নং সড়কে। এছাড়াও উত্তরা ৩ নং সেক্টরের ২ নং রোড মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মহাসড়কে বেপরোয়া ছিনতাই বেড়ে গেছে। বহু মদের বারের কারণে সেক্টরবাসীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত রাতের বেলায় যুবক যুবতীরা মদ্যপ অবস্থায় বিবাদে জড়াচ্ছে। এছাড়াও হাউজবিল্ডিং থেকে খালপাড় সড়কে বেপরোয়া রাইদা বাস। তারা যত্রতত্র পার্কিং করে রাখে এবং বেপরোয়া গতিতে পাল্লাপাল্লি করে চলাচল করে।’
উত্তরা ১৪ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতি ও উত্তরা পশ্চিম থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘১৪ নম্বরের ক্যাম্পফায়ার বারের অপসারণ চাই। তাদের কারণেববয়স্ক মানুষ ঘুমাইতে পারেন না। বাড়িওয়ালা বলছে, শীঘ্রই অপসারণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় কিভাবে এমন একটি মাদকের প্রতিষ্ঠান দেয়, সেটি বোধগম্য নয়। আমরা চাই, সেটি অপসারণ হোক।’
মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘১০ নং সেক্টরের ফুটপাতে চায়ের দোকানদার চায়ের সাথে মাদকও বিক্রি করে। সেই সাথে বেপরোয়া অটোরিকশার চলাচল, যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।’
১০ নং সেক্টরের ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য মাহবুব ইমাম বলেন, ‘রাতে মনে হয় মোটর সাইকেল চলে না, প্লেন চলে। এছাড়াও সেক্টরে রাতে বহিরাগত প্রচুর মানুষ অবাধে চলাচল করে। যার কারণে নিরাপত্তার হুমকি মনে হয়।’
উত্তরা ৩ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও উত্তরা সেক্টরস এ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ মামুনুল হক বলেন, ‘পদ্মা সেতু সাড়ে ৭ বছরে কাজ শেষ করেছে। কিন্তু বিআরটিএ এক যুগেও শেষ করতে পারে নাই। তাই বলবো তিন নং সেক্টরের রোডগুলো খুলে দিবেন।’
তিনি বলেন, ‘সেক্টরের কিছু কিছু রাস্তা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তারা মুখে ব্লেড রাখে। বাধা দিতে গেলেই তারা হামলা করে। এছাড়াও হকার বসানোর নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি হয়। আমরা এসব চাঁদাবাজদের কবল থেকে মুক্তি চাই।’
এসব বিষয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উত্তরা জোনের এডিসি মির্জা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘হকারদের একজনকে পর পর তিনবার চালান করেছি। কিন্তু সাঁজা হয় ১০০/২০০ টাকা জরিমানা। যা তার সাহসটা আরো বাড়িয়ে দেয়। আর তারা কাউকে না কাউকে ২০০/৩০০ টাকা চাঁদা দিচ্ছে দৈনিক। যা সাজার থেকেও বেশি। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের হেল্প দরকার। তারা সকালে উচ্ছেদ করে, বিকেলে মালামাল দিয়ে দেয়। যার কারণে
তিনি বলেন, ‘মদের বারের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। সরকার লাইসেন্স দিয়েছে শুধু মাত্র পারমিট ধারী ব্যক্তির কাছে মদ বিক্রি করা। যদি পারমিট ধারী ব্যক্তি ছাড়া মাদক বিক্রি করে তাহলে আমাদেরকে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
মাদক প্রসঙ্গে এডিসি সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যারা মাদক সেবী, তারা নিজেরাই ভিক্টিম। আর যারা ব্যবসা করে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। স্বাক্ষীর অভাবে মামলা নষ্ট হয়।’
যানজটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মার্কেটে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নাই। আন্ডারগ্রাউন্ড আছে কিন্তু পার্কিং নাই। দোকান বসিয়ে দিয়েছে। যা নৈতিকতা বিরোধী। যার কারণে আরো যানজটের সৃষ্টি বেশি হয়।’