নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ১০টি হাসপাতাল। হাসপাতালগুলোতে হাঁচি, সর্দি ও কাশির জন্য আলাদা কাউন্টার থাকলেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কোনো কোনো হাসপাতালের কিছু কিছু কাউন্টারে ঝুলছে তালাও। সেজন্য অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় নিয়োজিত কর্মীদের।
কিন্তু ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর কমতে থাকে রোগীর সংখ্যা। সংক্রমণ রোধে সবশেষ ২৬ মার্চ থেকে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ও সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হলে হাসপাতালগুলো খালি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) এসব হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবগুলো হাসপাতাল যেন শূন্য হয়ে গেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের আনসার সদস্য সামাদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রবেশের জন্য আগে থেকেই কড়াকড়ি রয়েছে। এখানে আগে প্রতিদিন সারা দেশ থেকে অনেক রোগী আসতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সারাদিনে খুব কম রোগী আসছেন। আবার কারও মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা গেলে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কারও যদি এ ধরনের উপসর্গ না থাকে তবেই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন।
পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে নতুন করে তেমন কোনো রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। বেড সব ফাঁকা পড়ে আছে।
পাশেই ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতাল, সেখানেও কোনো নতুন রোগী ভর্তি হননি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে কেবল নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদেরই দেখা যায়। কোনো রোগী আসেননি বলে জানান তারাও।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে দেখা যায়, পুরনো রোগীর স্বজনেরা ছাড়া কোনো ভিড় নেই। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের অনেককে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সারাদিনে ৫ জন রোগী এসেছেন।শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, একজন কর্মকর্তা টিকেট কাউন্টারে বসে থাকলেও নেই রোগী বা তার স্বজনদের কোনো ভিড়। হাঁচি, সর্দি ও কাশির জন্য আলাদা কাউন্টার থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। বরং কাউন্টারে ঝুলছে তালা।
জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে গেলে সেখানে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ এবং মারা গেছেন ২২ হাজার ৫৮ জন মানুষ। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ১৭ হাজার ৬০৭ জন।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন পাঁচজন। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১১ জন।
করোনার বিস্তাররোধে দেশের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চীন ও যুক্তরাজ্য ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আদালতও। এমনকি একাধিক এলাকাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দেশের সব জেলায় মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।
সূত্র: জাগো নিউজ