প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক বিস্তারের প্রভাবে সারাবিশ্বব্যাপী এখন স্হবিরতা বিরাজ করছে। বিশ্বের ভূরাজনীতিতে, একটি বড় ধরনের পরিবর্তন সুনিশ্চিত করতে যাচ্ছে করোনাভাইরাস। প্রতিনিয়ত বিশ্বরাজনীতি পরিবর্তিত হয় স্বাভাবিক কিছু প্রক্রিয়ায়। ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে পতন ঘটেছিল ব্রিটিশ আধিপত্যবাদের।
করোনাভাইরাস মহামারিকে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রন না করতে পারে তাহলে সামনের দিনগুলোতে মার্কিন আধিপত্যও পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্হিতি মোকাবিলায় যে হিমশিম তা তার কার্যক্রমগুলোতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমেরিকায় বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এসময়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শোনাতে পারছে না কোন আশার বাণী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়েই এখন হাহাকার শোনা যাচ্ছে পিপিই, মাস্ক ও ভেন্টিলেটরের। এই হাহাকারগুলোই সংকটকালীন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ব্যর্থ তা নিশ্চিত করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতার সাথে তার বিশ্ব নের্তৃত্ব দেবার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই উদ্ভূত পরিস্হিতির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ ও কানাডার মাস্ক ছিনতাই করে বিশ্বকে নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। তাহলে কি এই সংকটেই বিশ্বব্যবস্হাকে নতুন পথ দেখাবে? ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন প্রশাসন ১৯৫০ সালের কোরীয় যুদ্ধকালীন প্রণীত প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন অনুযায়ী এগুলো জব্দ করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্দেশ জারি করেছেন যে, এই আপদকালে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মেডিক্যাল প্রোডাক্ট অন্যদেশে রপ্তানি করা যাবে না। এই প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইনের প্রয়োগ আমেরিকা এর আগে ১৯৫০ সালের কোরীয় যুদ্ধের সময়, ১৯৮০ সালে এবং ২০১১ সালে করেছিল। ওয়াশিংটন যখন দুর্দিনে তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাথে পক্ষপাতমূলক আচরণ করলো, তখন বেইজিং বিশ্বব্যবস্হার এই শক্তিশূণ্য অবস্হার সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। চীন সারাবিশ্বে তার সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে। যে ককরোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ঘটেছিল চীনে, সেই চীন প্রথমদিকে তথ্য গোপন করে অভ্যন্তরীণভাবে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করেছে এই সংক্রামক ভাইরাসকে।
এখন শি জিন পিংয়ের চীনেই পথ দেখাচ্ছে বিশ্বকে এই ভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধে। চীন এখন মাস্ক, ভেন্টিলেটর ও ঔষুধ সরবরাহ করে যাচ্ছে আক্রান্ত দেশগুলোকে। যখন ইউরোপের কোন দেশ ইতালির দুঃসময়ে এগিয়ে আসেনি, তখন চীন প্রতিশ্রুতি দেয় ইতালিতে ১০০০ ভেন্টিলেটর, দুই মিলিয়ন মাস্ক,২০০০০ পিপিই এবং ৫০০০০ টেস্টিং কিট পাঠানোর। ইরান ও সার্বিয়াতে ২,৫০,০০০ মাস্ক পাঠায় চীন। একারণে, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউরোপের ঐক্য একটি কল্পকাহিনী ছাড়া কিছু নয়, একমাত্র চীনেই পারে আমাদের সাহায্য করতে। পাশাপাশি, চীনের বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে টেস্ট কিট এবং মাস্ক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। জ্যাক মা ২০,০০০ টেস্ট কিট এবং একলাখ মাস্ক আফ্রিকার ৫৪টি দেশে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
চীন এখন সারাবিশ্বের মোট চাহিদার অর্ধেক এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করছে। তাছাড়া, চীন ঔষুধ তৈরির কাচাঁমাল, ঔষুধ উৎপাদন করে সারাবিশ্বব্যাপী সরবরাহ করছে। পক্ষান্তরে, আমেরিকা নিজেদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম অবস্হায়, অন্যদের সহায়তা করা এখন তাদের কাছে দিবাস্বপ্ন। ইবোলা সংকটকালীন ২০১৪-১৫ সালে আমেরিকা তার মিত্রদেশগুলোকে নিয়ে এই ভাইরাস বিস্তার ঠেকানোয় নের্তৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু, এবার চীন তার ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর সাথে ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছে ও সহায়তা কততততততরছে।
চীন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেন্ট্রাল ও পূর্ব ইউরোপে ১৭+১ কৌশলের মাধ্যমে, ও সাংহাই সহযোগিতা সংস্হার মাধ্যমে। এশিয়া ও আফ্রিকাসহ সারাবিশ্বে চীন চাইছে তার হেলথ সিল্ক রুট প্রতিষ্ঠা করতে।
বিশ্বব্যাপী চীনের এই সাহার্য্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া নয়া বিশ্বব্যবস্হা,নয়া পরাশক্তির আধিপত্যের বিস্তারের সূত্রপাত ঘটাবে।
লেখক: মোঃ হাসান তারেক,
প্রভাষক,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ডক্টর মালিকা কলেজ, ঢাকা।