সারাবিশ্ব এখন করোনার আতঙ্কে কাঁপছে। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি সবর্ত্র লকডাউন বিরাজ করছে। ভারতেও জারি করা হয়েছে ২১ দিনের লকডাউন।
কিন্তু, কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না সারাবিশ্বব্যাপী চলমান মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ও মৃত্যুর তালিকা প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে। এখন পযর্ন্ত করোনা কেড়ে নিয়েছে বিশ্বজুড়ে ১৮৮৯১ জনের প্রাণ। সর্বমোট ১৯৭টি দেশে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১লাখ ৮ হাজার ৮৭৯জনে।
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ইতালিতে। ইতালিতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৮২০ জন। সারাবিশ্বের চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, অথর্নীতিবিদগণ এখন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। সকলে সন্ধান করার চেষ্টা করছে মুক্তির পন্থা, ভাইরাসের প্রতিষেধকের। এ যেন ভাইরাস বনাম মানব সভ্যতার এক অঘোষিত লড়াই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে আজ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মানবসভ্যতার অসহায়ত্বকে। তাহলে কি মানুষ হেরে যাবে করোনার কাছে? না বিষয়টি এরকম নয়। ভাইরাস নয় বিধাতার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষেই জিতবে এই লড়াইে।
এক্ষেত্রে, মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে এই ভাইরাসের উত্থানস্হল চীনের উহান। ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোর কিছু পদ্ধতিগত ভুল সর্বদা প্রতীয়মান হচ্ছে। যা ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেনেও দেখা যাচ্ছে। চীনারা সফল হয়েছে, তাদের কঠোর পদক্ষেপ, সামাজিক দুরত্ব প্রতিষ্ঠা, সুশৃঙ্খলিত জীবনাচরণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন বা অন্যান্য দেশগুলো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার জন্য দুরবস্থার শিকার হচ্ছে বা হয়েছে। অতি আক্রান্ত দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উচিত হবে করোনা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। নতুবা, সময় গেলে সাধন হবে না। কেননা, করোনা আক্রান্তের হার যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তা সত্যিই ভয়ের কারণ।
একারণে, অনেক দেশের বিশেষজ্ঞরা একথার সাথে একমত হয়েছেন যে, করোনা ভাইরাসের পিছে নয়, ছুটতে হবে আগে। করোনার সাথের এই লড়াই কোন রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানের একার নয়, লড়াই সকল জনগণের। সচেতন হতে হবে সকল জনগণকে ব্যক্তি পর্যায় থেকে। এগিয়ে আসতে হবে, সমাজের বিত্তবানদের। চিকিৎসক, নার্সদের জন্য সরবরাহ করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই। আক্রান্ত ও সন্দেহভাজনদের জন্য পর্যাপ্ত র্কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এখন পযর্ন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী পন্হা হচ্ছে, সামাজিক দুরত্ব তৈরি।
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সামাজিক দুরত্ব তৈরি করতে পারলেই ৮০ শতাংশ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্ত, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সামাজিক দুরত্ব তৈরি করা নিয়ে সরকার প্রধানদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকার প্রধান সামাজিক দুরত্ব সৃষ্টির জন্য যখন সরকারি ছুটি ঘোষণার সাথে সাথে মানুষ দল বেধেঁ ঢাকা ছাড়তে লাগলো যা একেবারে হিতে-বিপরীত হয়ে গেল। একথা তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সচেতনতা সৃষ্টি একমাত্র পন্হা।ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমাদের লড়াই শুরু করতে হবে এই ভয়ানক প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিপক্ষে। ছুটতে হবে, ভাইরাসের আগে, ভাইরাসের পিছে নয়। সামনের দিনগুলোতে, করোনাভাইরাসের কারণে বদলে যেতে পারে আন্তজার্তিক রাজনীতির চিত্র।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারক দেশ সামনের দিনগুলোতে বিশ্বকে পথ দেখাবে এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে। যেহেতু, চীন ও উহান প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধে সফল হয়েছে এজন্য চীনের আধিপত্যই সামনের দিনগুলোতে প্রতীয়মান হচ্ছে। চীন এখন তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইতালি, ইরান এবং ভাইরাস আক্রান্ত অন্যান্য দেশগুলোতে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের দেওয়া বক্তব্য গুরুত্ববহ ও দিকনির্দেশনামূলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে দুর্যোগময় পরিস্হিতির সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্য সংশয় ও হতাশার সৃষ্টি করছে। করোনা প্রতিরোধে আমেরিকা যখন ব্যর্থ হচ্ছে, ঠিক তখন দুর্বার গতিতে আলো দেখাচ্ছে চীন।
শুধু, আন্তজার্তিক রাজনীতিই নয় করোনার প্রভাব অদূর ভবিষ্যৎতে বিশ্ব অথর্নীতি, বাজারব্যবস্থা ও চিকিৎসাব্যবস্থায় লক্ষণীয়ভাবে প্রতীয়মান হবে। তবে, আশা থাকবে মানুষ তার ভুলগুলো শুধরে, যথাযোগ্য চিন্তনের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু করবে।
মোঃ হাসান তারেক,
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ডক্টর মালিকা কলেজ, ঢাকা।