ওয়াজ উদ্দিন, টঙ্গী (গাজীপুর) :
টঙ্গীর তুরাগ নদীর পূর্ব তীরে বিশ্ব মুসলীম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় সমাবেশ গতকাল শনিবার ছিয়াশিটি যৌতুকবিহীন বিয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব অতিবাহিত হয়েছে। আজ রোববার জোহরের নামাজের আগে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা জামশেদ। এর আগে বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুরসালিন। তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান শেষে বিভিন্ন খিত্তায় নিজেদের মধ্যে বয়ান নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার, বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা মোশারফ হোসেন ও বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জমশেদ। এসব বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক তরজমা করে মুসল্লীদের শুনানো হচ্ছে।
বয়ান:
ইমান, আখলাক, দিনের উপর মেহনত,ইসলামকে শক্তিশালী করা, সকল ভেদাভেদ ভূলে নিজের দেশ ও মুসলিম উম্মার শান্তি বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখা, নবী ওয়ালা কাজে দিন ও সময় ব্যয় করা। পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছাড়য়ে দেয়া।ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা।নামাজ রোজা ও আল্লার এবাদত করা পালনের উপর বয়ান করা হয়। আখেরি মোনাজাতের পূর্বে হেদায়েতি বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা জামশেদ। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরব্বি মাওলানা আশরাফ আলী জানান, হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা জামশেদ। গত শুক্রবার রাতে তাবলিগ জামাতের মুরব্বিদের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়।
যৌতুক বিহীন বিয়ে:
গতকাল শনিবার মূল বয়ান মঞ্চে যৌতুক বিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত না হলেও ইজতেমা ময়দানের বিশেষ কামরায় (কক্ষে) বর ও কনের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ছিয়াশিটি যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমান ধরা হয় ১৫০ তোলা রুপা বা উহার সমমূল্য অর্থ ১ লাখ ৫হাজার টাকা।
আরো ৪ মুসল্লির মৃত্যু :
বিশ্ব ইজতেমায় আসা আরো চার মুসল্লি মারা গেছেন। তারা হলেন- রংপুরের পীরগঞ্জ থানার ওসমানপুর এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৬০), ঝিনাইদহ সদরের কালাহাট গোপালপুর এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে আ ফ ম জহুরুল আলম (৬৫), ঢাকার তুরাগ থানাধীন নলভোগ এলাকার ফজলুর রহমানে ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫) এবং গাইবান্ধার সাঘাটা থানার কামালেরপাড়া এলাকার ভিলু হাজীর ছেলে আব্দুর সোবাহান (৬৫)। এই নিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ৭জন মুসল্লীর মৃত্যু হলো।
দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাতের সময় বন্ধ থাকছে যেসব সড়ক
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত আগামীকাল রোববার। এ উপলক্ষে ভোর ৫টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মহাখালী থেকে জয়দবেপুর চৌরাস্তা, মীরেরবাজার থেকে টঙ্গী ও আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাস সড়ক পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। শনিবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইজতেমায় অংশ নেয়া কয়েক লাখ মুসল্লি ছাড়াও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইচ্ছুক অসংখ্য মুসল্লির যাতায়াতের সুবিধার্থে ভোর ৫টা থেকে বিমানবন্দর-গাজীপুরের জয়দেবপুর, চৌরাস্তা, মিরেরবাজার-টঙ্গী, আবদুল্লাপুর থেকে বাইপাস সড়কে আশুলিয়ায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমাসংলগ্ন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ইজতেমায় যোগ দেয়া বৃদ্ধ মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমাস্থল থেকে চৌরাস্তামুখী ৩০টি এবং মহাখালীমুখী ৩০টি বাস চলাচল করবে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভাল রয়েছে। আশা করছি বাকি সময়টুকুও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।’ এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত রবিবার ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। গত শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে মাওলানা সা’দ অনুসারি মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। বিশ^ ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আজ রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের বিশ^ ইজতেমা।
বিদেশী মুসল্লিদের অংশগ্রহণ
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩৫ দেশ থেকে দেড় সহস্রাধিক মুসল্লি আসেন। ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে রয়েছেন বিদেশি মেহমানরা।
যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ:
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মিরেরবাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত, কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এবং বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তিনি বলেন, ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। প্যান্ডেলের ভেতরে ও বাইরে মুসল্লি বেশে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহস্রাধিক সদস্য।