এম জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী:: শেষ সম্বল ঘর ও আসবাবপত্র সহ মালামাল সর্বনাশা আগুনে পুড়ে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে ফ্লোরা পরিবার। শুধু ফেলফেলিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর একেরপর এক নিঃশ্বাস ছাড়ছে। যেন এক জ্যান্ত লাশে পরিনত হয়ে গেছে পরিবারটি।
ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের জৌতা গ্রামে মোনসোর রারীর বাড়িতে। গত ঈদ রমজানের আগে শবেবরাতের সপ্তাহ খানেক পূর্বে দিনদুপুরে এক আগুনে ঘর ও আসবাবপত্র সহ মালামাল পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে মোনসোর রারী ও ছেলে ইউসুফ রারীর। অসহায় দুস্থ গরীব স্বামী ও শ্বশুর সহ পরিবারের মাথা গোজার ঠাই শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ফ্লোরা বেগমের দুর্ভোগ ভোগান্তি কষ্টের সীমা যেন নেই।
দুরসংবাদ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে ঘর দুয়ার ও মালামাল। যেন কোনও চিহ্নই নেই। শুধু ভিটা মাটি পড়ে আছে একাকার হয়ে। ঘর সংলগ্ন বাড়িতে তেঁতুলগাছ, নারিকেল গাছ সহ অন্যান্য গাছ আগুনের লেলিহানে পুড়ে গেছে কোনটার অর্ধেক আবার কোনটা পুরো।
নিঃস্ব ফ্লোরা বেগম বলেন, আমরা অসহায় দুস্থ গরীব। আমার বিয়ের পরপরই আমার স্বামী আমাকে নিয়ে বরিশাল গিয়ে বাসা ভাড়া করে রিকসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। শ্বশুর তার বাড়িতে থাকতেন। অনেক কষ্ট কেলাস করে, মানুষের কাজকর্ম করে সেই টাকা জমিয়ে টিনের চারচালা একটি ঘর তৈরি করে। দেশে মহামারি করোনার প্রকব দেখা দিলে আজ থেকে ৩ বছর পূর্বে আমরা মালছাবানা নিয়ে গ্রামে এসে শ্বশুরের ঘরে ঠাই নেই। অনেক কষ্ট কেলাস করে ঠিকমতো না খেয়ে সেই টাকা দিয়ে একটা দুইটা করে মালছাবানা জোটাইছি। তা আজ সর্বনাশা এক আগুন আমার সব শেষ করে দিয়ে চলে গেছে। আজ আমি নিঃস্ব পরিবার নিয়ে।
ফ্লোরা বেগম আরও বলেন, গত শবেবরাতের সপ্তাহ খানেক আগে আমার শ্বশুরের একলা একটা বাড়ি। সেই বাড়িতে আমি একলা বসে ঠিক দুপুরবেলা রান্না শুরু করি। শ্বশুর গেছেন কাজ করতে, শ্বাশুড়ি গেছেন পাশের বাড়ি। আর স্বামী গেছেন রিকশা চালাতে। তারা দুপুরে খেতে আসবেন তাই রান্না করছি এমন সময় ঘরের পিছন থেকে হঠাৎ আগুনের লেলিহান দেখে সবাইকে ডাকচিৎকার দিলে সবাই আসলেও ঘর, আসবাবপত্র সহ মালামাল সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘর থেকে কিছু সরাতে পারিনি। আমার সব আশা ভরসা স্বপ্ন পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ টাকা পয়সার অভাবে ঘর দুয়ার কিছুই করতে পারিনি। অন্যের ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। আমরা আপনাদের সাহায্য সহায়তা চাই বলে বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন ফ্লোরা বেগম।
ফ্লোরা বেগমের শ্বশুর বৃদ্ধ মোনসোর রারী বলেন, সারাজীবন কতো কষ্ট কেলাস করেছি। ঠিকমতো না খেয়ে সেই থেকে এক টাকা দুই টাকা জমিয়ে কোনও রকম টিনের চারচালা ঘর করি। কিন্তু সেই ঘর খানা আমার অসহায় ছেলে ইউসুফের আসবাবপত্র মালামাল সহ এক সর্বনাশা আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। আজ আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। অন্যের ঘরে এখন রাত যাপন করছি। ঘর খানা করব সেই সামর্থ্য নেই। ছেলে ইউসুফ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। আমরা আপনাদের সাহায্য সহায়তা চাই, আমাদের সাহায্য করুন বলে বৃদ্ধ মোনসোর রারীর যেন আকুতি থামছে না।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, তারা অসহায় দুস্থ গরীব। আজকে শেষ সম্বল টুকু পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। জীবনে কতো কষ্ট কেলাস করেছে তারা তার সীমা রেখা নাই। আগুনে সব শেষ করে দিয়ে চলে গেছে। আমরা সবাই চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে।
স্থানীয় মেম্বার হারুন বলেন, খুবই কষ্টকর বেদনাদায়ক। পরিবারটি আগুনে সব হারিয়ে আজ চরম অসহায় হয়ে পড়েছে। আসুন আমরা সবাই এ অসহায় পরিবারের সাহায্যের্থে এগিয়ে আসি।
চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, আসলেই খুব মর্মান্তিক বেদনাদায়ক। দেখি পরিবারটি জন্য কিছু একটা করব।