আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রেমে-ভালোবাসায় মাতোয়ারা হওয়ার দিন আজ। প্রকৃতির পালাবদলে কাল এসেছে বসন্ত, সেই ফাগুনের মাতাল হাওয়ায় আজ উদ্দাম ভেসে যাবে প্রেম পিয়াসী তরুণ-তরুণী, ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে হৃদয়। মনের যতো বাসনা, যতো অব্যক্ত কথা ডালাপালা মেলে ছড়িয়ে পড়বে বসন্তের মধুর হাওয়ায়। কপোত-কপোতী পরস্পরকে নিবেদন করবে মনের যতো কথা, জানাবে ভালোবাসা। আজ চুপকথা শুনবার ও শোনানোর দিন। আজ কারো কারো চুপকথাগুলো হয়ে যাবে রূপকথা। সারাজীবন মনে রাখার মতো গল্প।ভ্যালেনটাইনস ডেভ্যালেনটাইনস ডে
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’। তবে শুধু তরুণ-তরুণী শুধু নয়, আজ সব বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন আজ। এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি।
ভালোবাসা নিয়ে অজস্র কবিতা আর গান আজ মুখে মুখে মনে মনে সুরে-বেসুরে আবৃত্তি আর গীত হবে। আজ প্রিয়তমার হাত ধরে কিংবা পাশে বসে অনেকেই রচনা করবে নিজেদের ভবিষ্যত।
আজ মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে ছোট ছোট কথায় গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের সোপান। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই- মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেমবার্তা, প্রিয় উপহার, অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া হয়।অন্যদিকে আজকের এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসায় আপ্লুত হতে পারে সবাই। চলবে উপহার দেওয়া- নেওয়া।ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেইন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভিন্ন মত অনুযায়ী সেইন্ট ভ্যালেনটাইন একজনকে ভালোবেসেছিলেন। চিঠিটি লিখেছিলেন তার কাছেই।
ভ্যালেনটাইনস ডে সর্বজনীন হয়ে ওঠে আরও পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরানের বিয়ে ও সন্তানের দেবি জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তাদের নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
দিনটিকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, বইমেলা চত্বর থেকে শুরু করে এর আশেপাশের এলাকায় থাকছে দিনভর নানা অনুষ্ঠান। আজ সকালে অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য র্যালি, সূচনা সঙ্গীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠি পাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ আরও নানা কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি পালনে আজ সকাল ১০টায় শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ভালোবাসার কনসার্ট।
এদিকে, ঢাকা মহানগরীকে আরও পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন করার উদ্দেশ্যে এদিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা করেছেন ‘লাভ ফর ঢাকা উৎসব’ প্রচারাভিযান। আর এসব অনুষ্ঠানের কারণে আজ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিজয় সরণি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মহাসড়ক বন্ধ থাকবে।
/টিএন/